শিশু ও বয়স্ক উভয়ই বাঁকা হাটু ও লেগ এ আক্রান্ত হতে পারে । অনেকই এ সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন । প্রায়ই পিতা মাতা জানতে চায়, তাদের বাচ্চাদের হাঁটু ও ল্যাগ কি স্বাভাবিক ? অনেক পিতা মাতা সরাসরি বলে তাদের বাচ্চাদের হাঁটু ও লেগ বাঁকা । বাঁকা (বো) একটি টেকনিক্যাল শব্দ যা একটি শিশুর স্বাভবিক বৃদ্ধির অংশ । তবে চিকিৎসক হিসাবে সম্যক জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন কোনটা স্বাভাবিক (ফিজিওলোজিক) বৃদ্ধির অংশ এবং কোনটা রোগের (প্যাথলোজিক) কারণে হয়েছে । হাঁটু ভিতরের দিকে বাঁকা হলে একে জেনু ভেরাস বলে এবং বাহিরের দিকে বাঁকা হলে, একে জেনু ভালগাস বলে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বাঁকা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না । কিন্তু রোগের কারনে বাঁকা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় । যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহন না করলে বাঁকা বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যান্য অসুবিধা দেখা দিবে । স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লেগ ও হাঁটুর বাঁকা অংশ তিন থেকে সাত বৎসর বয়সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে । কিন্তু বাঁকা অংশ এ সময়ে বৃদ্ধি পেতে থাকলে কারণ অনুসন্ধান করে কারণ ও বাঁকা অংশের চিকিৎসা প্রদান করতে হবে । জম্নগত কারণে জোড়ার লিগামেন্ট ও পেশী না থাকলে বা থাকলেও ঢিলা বা সংকুচিত, হাড়ের অস্বাভাবিক আকৃতি ও অবস্থান হলে হাঁটু ও লেগ বেঁকে যেতে পারে । ভিটামিন ডি (রিকেট) ও ক্যালসিয়াম অভাব, ব্লাউন্ট রোগ হলে এবং আঘাতে হাড়ের বৃদ্ধির তারতম্যের কারণে হাঁটু ও লেগ বেঁকে যায় । বয়স্কদের ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম অভাব (ওসটিওপোরোসিস ও ওসটিওমালাসিয়া), হাড় ভাঙা ও জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট, পেজেটস ডিজিস এবং আর্থ্রাইটিস (রিউমাটয়েড অসটিওআর্থ্রাইটিস) হয়ে হাঁটু বেঁকে যায় । হাঁটু বেঁকে গেলে ব্যথা হয় এবং জোড়ার স্বাভাবিক গঠন, স্থিতিশীলতা ও ভারসম্য নস্ট হয়ে জোড়ায় শক্তি কমে যায় । ফলে হঁটতে, বসা থেকে উঠতে, উচু নিচু জায়গায় হাঁটতে এবং সিড়ি দিয়ে উঠা নামা করতে অসুবিধা হয়
লক্ষ্যনীয় দিকগুলি :
- দু’হাঁটু বাঁকা – আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির অংশ ।
- বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দু’হাঁটুর বাঁকা বেড়ে যাচ্ছে। রোগের কারণে হচ্ছে এবং এর চিকিৎসা প্রয়োজন ।
- এক হাঁটু বাঁকা এবং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । রোগের কারণে হচ্ছে এবং বাঁকা হাঁটু ও রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন।
- ক্রমান্বয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে । এর চিকিৎসা প্রয়োজন ।
প্রতিরোধ :
প্রতিরোধের প্রধান লক্ষ্য হল জোড়ার স্থিতিশীলতা, ভারসাম্য, স্বাভাবিক গঠন ও শক্তিমত্তা ঠিক রাখা এবং ভবিষ্যতে অসটিওআর্থ্রাইটিসের ভয়াবহ জটিলতা হতে জোড়াকে রক্ষা করা । পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্ঠিখাদ্য, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সেবন করতে হবে । শিশু যাতে ডায়রিয়া ও মেলনিউট্রিশনে না ভোগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । জম্নগত ক্রুটির চিকিৎসা দ্রুত করতে হবে এবং ফিজিক্যাল স্ট্রেসিং ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে জোড়াকে রক্ষা করতে হবে। প্রথম অব¯হায় স্প্লিন্টিং, ব্রেচিং, হাঁটু সাপোর্ট এবং থেরাপিউটিক সু ব্যবহার করলে হাঁটু ও লেগের স্বাভাবিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে ফিরে আসবে ।
চিকিৎসা বা করণীয়:
বাঁকা হাঁটু ও লেগের চিকিসার শুরুতেই এর কারণ অনুসন্ধান করে, রোগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে । যথোপযুক্ত চিকিৎসার অভাব হলে বা যথাসময়ে না হলে হাঁটুর অসুবিধার কারণে গোড়ালি, কটি ও মেরংদন্ডের জোড়ায় জটিলতা দেখা দিবে । প্রথম অবস্থায় স্প্লিন্টিং, ব্রেচিং, হাঁটু সাপোর্ট এবং থেরাপিউটিক সু ব্যবহার করলে হাঁটু ও লেগের স্বাভাবিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে ফিরে আসবে । আঠার বয়সের পূর্বে হাড়ের বৃদ্ধি স্থানের ক্লিপিং করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৃদ্ধি স্থানের নীচে হাড় কেটে হাঁটু ও লেগকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয় । প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় কেটে হাঁটু ও লেগ সোজা করতে হবে এবং প্রয়োজনে লিগামেন্ট ক্সতরী করতে হবে । আঘাত ও আর্থ্রাইটিসের কারণে জোড়ার ভয়াবহ ক্ষতি হলে জোড়া পুন:স্থাপন করতে হবে । পরিশেষে বলা যায়, চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম ।
লেখক: ডা: জি. এম. জাহাঙ্গীর হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূনর্বাসন প্রতিষ্ঠান(নিটোর), ঢাকা
[প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হেলথকেয়ার প্রফেশনাল হন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা.কম এ লিখতে পারেন। রোগ লক্ষন ও প্রতিকার, ওষুধ, খাবারের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইফস্টাইল নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবিসহ ই-মেইল করুন- write@shasthoseba.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]